কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর, কলকাতার বালিগঞ্জে, পায়ে হেঁটে ট্রাম লাইন পার হতে গিয়ে, দুর্ঘটনায় পতিত হন এবং ২২ শে অক্টোবর, কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুয়ায়ী, জীবনানন্দ, হাতে করে একটি ডাব নিয়ে, ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন এবং সে সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে, তাঁর মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয় বিতর্ক, এ কী অপঘাতে মৃত্যু না আত্মহত্যা ?
এই বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পেছনে যেসব কারণ,
১। একজন পরিণত বয়স্ক ব্যক্তি, ট্রাম আসছে দেখেও কেন, ট্রাম লাইন পার হতে যাবেন ?
২। ট্রাম লাইনে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর দৃষ্টান্ত বিরল ।
এসব বিতর্কের ভিত্তিকে আরো মজবুত করে তোলেছে, কিছু কিছু বিষয়,
ক) কবি প্রচন্ড অর্থকষ্টের শিকার হয়ে ছিলেন,
খ) স্বীকৃতির অভাব, তাঁকে অভিমানী করে তুলেছিলো,
গ) স্ত্রী লাবন্যের সাথে তাঁর সম্পর্ক, অনেকটাই ধূসর হয়ে উঠেছিলো,
ঘ) জাগতিক নি:সহায়তা, মৃত্যুর প্রতি তাঁর স্পৃহাকে বাড়িয়ে তুলেছিলো,
সুতরাং, দুর্ঘটনার কারণ এবং কবির জীবনে সে সময়ে চলতে থাকা নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতি, কবির মৃত্যুকে বিতর্কের বিষয়বস্তু করে রেখেছে। এ বিতর্ককে আরো জোরদার করে বাঁচিয়ে রাখে, কবির তর্কাতীত সৃষ্টি,
“জানি-তবু জানি
নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;
অর্থ নয়, র্কীতি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে, আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত ক্লান্ত করে:
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই, লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।