বিশ্বজুড়ে রয়েছে রহস্যের ভান্ডার। বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে সেইসব রহস্য উন্মোচন করার। অনেক অনেক ক্ষেত্রে দারুন সাফল্যও পেয়েছে বিজ্ঞান। কিন্তু কিছু কিছু জায়গা আছে, যারা নিজেদের রহস্যকে এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের শত চেষ্টার পরেও তাদের ব্যাপারে সত্যটা জানা যায়নি এখনো। বিভিন্ন লোকগাথা, প্রাচীন ধারণা এবং কুসংস্কারে ঢাকা তেমনই পাঁচটি স্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ-

১ . সূর্যের দরজা, তিব্বত, বলিভিয়া
২০০০ সালেই ইউনেস্কো তিওয়ানাকু অঞ্চলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটি একটি প্রি-কলাম্বিয়ান নৃতাত্ত্বিক সাইট, যার অবস্থান পশ্চিম বলিভিয়ায়। আর এখানেই অবস্থিত সূর্যের দরজাখ্যাত অদ্ভুত রহস্যময় একটি জায়গা। এ দরজা কত বছরের পুরানো তা কেউ জানে না। কখন এবং কেন এটি তৈরি করা হয়েছিল, তা কেউ জানে না । বিজ্ঞানীদের মতে, এই দরজাটি বিভিন্ন গ্রহের অবস্থানের ধারণা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কারও কারও মতে এই দরজা আসলে ভিনগ্রহীদের হাতে তৈরি।
২ . ইয়োনাগুনি ডুবো শহর, জাপান
জাপানে জলের নিচে ডুবে থাকা ইয়োনাগুনি শহর এখনও একটি বড় রহস্য। বলা হয় যে প্রায় ১০০০ বছর আগে এই শহরটি জলে ডুবে গিয়েছে। অনেকে একে ‘জাপানের আটলান্টিস’ বলেও অভিহিত করেন। ধারণা করা হয় ভূমিকম্পের কারণে ডুবে গেছে ইয়োনাগুনি। জলের নিচে ডুবন্ত এই শহরকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানা গল্পকথা।
৩ . মহেঞ্জাদারো, পাকিস্তান
১৯২২ সালে সিন্ধু নদীর তীরে একটি পুরানো শহর আবিষ্কৃত হয়েছিল। যার নাম মহেঞ্জাদারো। কেউ এই শহর ধ্বংসের কারণ জানেন না। কেউ কেউ ধারণা করেন, শহরটিতে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। আবার কেউ ধারণা করেন বন্যা এবং মহামারীতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছেন শহরের বাসিন্দারা। এমনকি এখানে পারমাণবিক বোমা হামলারও ধারণা করেন কেউ কেউ। তবে আসল কারণ কিন্তু আজও অজানা।
৪. দৈত্য পাথর বল, কোস্টারিকা
কোস্টারিকাতে কলা গাছ রোপনের জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় বিংশ শতাব্দীর ৩০’র দশকে প্রচুর সংখ্যক বিশাল আকারের বল পাওয়া যায়। জঙ্গল পরিষ্কার করার সময়ে বুলডোজার দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় এসব বল। ফলে অনেকগুলো বল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলোর ভেতরে সোনা আছে, এমন গুজব ছড়ানোর পর অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ডায়নামাইট দিয়ে কিছু বল ফাটিয়ে ফেলে। পরে কর্তৃপক্ষ এসব নিদর্শন উদ্ধার করে জাদুঘরে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে। ঠিক কোথা থেকে এসব বল এসেছে বা কী কারণে, কারা এগুলো তৈরি করেছিল এ ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
৫. যেখানে সবাই যমজঃ
জায়গাটা কেরালা রাজ্যের কোধিনি। এই জায়গার বিশেষত্ব হলো এখানে সবাই যমজ। এটি সবার কাছে ‘টুইন গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামে যে দিকেই তাকান না কেন চোখে পড়বে জোড়ায় জোড়ায় একই রকম যমজ মানুষ। তাই এটি কেবল ভারত নয়, সারাবিশ্বের কাছেই হয়ে উঠেছে বিস্ময়কর গ্রাম। কারণ একমাত্র এখানেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যমজের বাস।২০১৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মুসলমান অধিবাসী এই গ্রামের মোট ২ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ২২০ জোড়া যমজের বাস। যেখানে সমগ্র বিশ্বে গড়ে এক হাজার মানুষের মধ্যে একজোড়া যমজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে কোধিনি গ্রামেই যমজের হার ৪২ শতাংশ।কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে বসবাস করছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। তবে মজার ব্যাপার হলো, এসব পরিবারে ২২০ জোড়ারও বেশি যমজ রয়েছে। কোধিনি গ্রামে সব ধরনের যমজ দেখা যায়। সাধারণ যমজ বা নন-আইডেনটিক্যাল টুইন এবং হুবহু একই রকম দেখতে আইডেনটিক্যাল টুইন। আবার দুটি যমজ ভাইবোনের দেখাও মিলবে। কিন্তু এই গ্রামে যমজের সংখ্যা এত বেশি কেন? বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। তা নিয়ে স্থানীয়দের ধারণা, ১৯৪৯ সালে এখানে প্রথম যমজ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এরপর থেকে প্রতি বছর এই সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে। কারও কারও মতে, গ্রামের পরিবেশ এবং জিনগত কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। কেবল এই গ্রামেই নয়, গ্রামের যেসব মেয়ের বাইরে বিয়ে হয়েছে সেখানেও তারা যমজ সন্তান জন্ম দিয়েছেন।স্বভাবতই কোধিনি গ্রামের এই অদ্ভুত ঘটনায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় সবাইকে। কারণ অনেক সময় একই চেহারার দুজন মানুষকে তারা নিজেরাই আলাদা করতে পারেন না। তবুও তারা এই একটি কারণে বেশ মজাও অনুভব করে থাকেন। এর যত ব্যাখ্যাই থাকুক না কেন, ভারতবর্ষের মানুষের কাছে এ এক অমীমাংসিত রহস্য।