কাইকোর নেশা বিজ্ঞানের আলোচিত কোন কিছু আবিষ্কার করা অন্যদিকে কাইকোর ভাই রাডার নিজেই বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব আবিষ্কার। রাডার নামটার পেছনে মজার কাহিনী বিদ্যমান।রাডার মূলত একটা ইংরেজি শব্দ যার কাছাকাছি কোন বাংলা অর্থ বের করা বেশ দুষ্কর। তেমনি রাডারের সাথে তুলনা দেওয়া যায় এমন মানুষ পাওয়াও বেশ দুষ্কর। হারকে হারোনো ই রাডারের কাজ।
আশেপাশে দশ গ্রামের সবাই একডাকে রাডারকে চিনে। আর চিনবেনা ই বা কেন,প্রতিদিনই তো কারো না কারো কাজে আসে রাডার। ভালো নাম সুজন। তার নামের সাথে আচরনের বেশ মিল রয়েছে। গ্রামের সবাই যেন তা বন্ধু। সে কতো মানুষের উপকার করে। মাঝে-মাঝে কেউ খুশি হয়ে কয়েকটা টাকা দেয়। এতে দুই পাচ টাকা রোজগারও হয়ে জায় তার। সারাদিনই এখান থেকে ওখানে গাছের ডালে-ডালে ঘুরে বেড়ায়। বড় ভাই কাইকোর লেখাপড়া আর বিজ্ঞানের প্রতি প্রবল নেশা থাকলেও,রাডারের পড়ার প্রতি কোন মনযোগ নেই।ক্লাসের সবার শেষের আগের রোলটা রাডারের। তবে সবার শেষের রোলটা ই হতো তার,বেচারা নতুন একটা ছাত্র ভর্তি হওয়াতে রোলটা এক আগে।আর বিজ্ঞান নিয়ে তার কোন আগ্রহ নেই বললেই চলে আর থাকবেই বা কি করে। সে নিজেই তো এ বিজ্ঞানী। তবে সিনাম বড় ভক্ত সুজন,বিশেষ করে বলিওডের সিনেমাগুলোর। বলিওডের এমন কোন অভিনেতা-অভিনেত্রী নেই যার না সে জানে না। সুজনকে প্রায় ই গ্রামের মোড়ে কালু চাচার চায়ের দোকানে দেখা যায়। সেখান থেকেই সিনেমা দেখা। গ্রামের বড় বটগাছটা সুজনের অফিস। তাকে দিনের সর্বক্ষনেই বটগাছটার নিতে খেলতে পাওয়া যাবে।
রাডার নামটা কে দিয়েছে তা ঠিক জানিনা তবে এ অদ্ভুত নামের পিছনে লুকিয়া থাকা কারণটা ভালোই আন্দাজ করে নিয়েছি। আমি ওকে আরেকটা অদ্ভুতুড়ে নামে ডাকি-"ছোটা ডিটেক্টিভ"। নামটা ওর বেশ পছন্দ ও। অ এতক্ষনে তো সুজনের বিশেষত্বটা ই বলা হলো না।
চলুন একটা উদাহরন দিয়ে বোঝানো যাক---""মনে করুন আপনি একটা মেলায় গিয়েছেন,হাজারো মানুষের ভিড় সেখানে। এবার ধরুন আপনার পকেট মাত্র একটা হাজার টাকার নোট আছে। হটাৎ টাকাটা আপনার পকেট থেকে হারিয়ে কোথাও পরে গেছে।আপনার ব্যপক মন খারাপ ঐ টাকা দিয়ে আপনি মেলা থেকে অনেক কিছু কিনতেন। কোন ব্যাপার না, সুজন যদি মেলায় এসে থাকে আপনি সুজনের কাছে যান, টাকা অবশ্যই পেয়ে যাবেন""
কী?? বুঝলেন না তো মশাই, চলুন সামনে এগোয় বুঝে যাবেন। রাডার নামটা আমরা সাধারনত কোন নির্দিষ্ট জিনিস এর উপস্থিতি খুজে বের করার যন্ত্রের জন্য ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সুজনের বেলায় মোটেও এমন না। সে যে কোন জিনিসের উপস্থিতি টের পায়,হারানো যে কোন জিনিস সে খুজে বের করতে পারে। ঐ যে মেলায় আপনার হারানো টাকাটা, নিশ্চিত থাকুন হাজারো মানুষের ভিড়েও টাকা রাডারের চোখে পরবেই।
ঐ তো কদিন আগে সোনালির মায়ের বড় সাধের সোনার চেইনটা হারিয়ে গেল। এ নিয়ে সারাগ্রামে কথোপকথন চলছে। বোধয় সোনালি হারিয়ে গেলেও এমন সরগোল হতো না। সোনালির মা দুদিন ধরে চেইন হারিয়ে যাওয়ার শোকে মুখে কিছু দিচ্ছেন না,
-আমার বড় খায়েশের চেইন,বাপজান বিয়ের সময় দিছিল।
স্বাভাবিকভাবেই ডাক পরল রাডারের, সোনালিদের বাড়িতে এসে হাজির রাডার সাথে ডজন কানেক বন্ধু-বান্ধব,হাতে কাচা আম। কার গাছ থেকে মেরেছে কে জানে।
-মন্টু কাকা, আইছি আমি! চেইন বলে হারনি গেছে, কিমুন চেইন?;
মন্টু মিয়া সোনালির বাবার নাম
-আয় বাবা। আরে তর কাকির বড় সাধের সোনার চেইনটা হারানো গেছে!;
-কই গেছিন আর কবে হারাইছে খুইলা কও তো?;
-গত দুদিন আগে তর কাকির মনে লইছে বইনের বাড়ি যাইব। সাধের চেইনটাও গলায় দিয়া গেছে,ওহু!;
-কাকি তোমার বইনের বাড়ি কই?
-এই আমাদের পরের গেরাম মজুদপুরে, সকালে গেছি আবার বিকালে বাড়ি আইছি।এই ফাকে কই পড়ল টের পাইছি না।
-মন্টু কাকা চেইন খুঁজাখুঁজি করছো!?
-হ গেরামের অর্ধেক মানু লইয়া বিছারছি,তয় পাইছি না। খুব ভালা কইরা বিছারছি। তুই ই শেষ ভরসা।;
কথা বলতে বলতে মন্টু চাচা আক্ষেপ করতে লাগলেন-"গেল রে চেইনডা খোয়া গেল"।
হারানো জিনিসকে হারিয়ে খুজে বের করাই রাডারের কাজ। বন্ধুর দল নিয়ে লেগে পড়ল কাজে সারা গ্রাম তন্ন-তন্ন করে খোজেও পাওয়া গেলনা চেইন। দুপুরবেলা কড়া রোদ্দুর, লাল গামছাটা মাথায় দিয়ে সুজনকে দেখা য়ায়, মজুদপুরের আগের চকটায়। ঘন্টাখানেক খোজার পর হটাৎ তার নজরে রোদে ঝিলমিল করতে থাকা সোনার চেইনটা।
মন্টু কাকা আর কাকি তো মহাখুশি। রাডার ও তার ববন্ধুদের দাওয়াত করে একবেলা খাওয়ালেন এবং মন্টু চাচা খুশি হয়ে রাডারকে দুইশত টাকাও দেন। এভাবেই কাটে রাডারের দিন। সে তার প্রতিভার কোনদিন অপব্যবহার করে না।
ঐতো সেদিন বাজারে যাবারকালে বাবার নয় হাজার টাকার বান্ডেলটা গ্রামের মোড়ে মিজান কাকার দোকানের সামনে পরে যায়।বাড়িতে এসে বাবার অনেক মন খারাপ।বাবাকে বললাম আচ্ছা বাবা কয়েকজন গিয়ে একবার খুজে দেখি পাই কিনা!;
-বাড়ির আশেপাশে যদি হারিয়ে থাকে তাহলে পাবি কিন্তু আমার মনে হয় বাজারে গিয়েই কোথাও পরে গেছে।আর বাজারে কত রকম মানুষের চলাচল! তবুও যা একবার খুজে দেখ।
যাইহোক তবে তা ই করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না,কোথাও টাকাগুলো পেলাম না।বাড়ি ফেরার পথে মিজান কাকা সহ আরও কয়েকজন দোকানদারকে বলে এলাম যে বাবার টাকা হারানো গিয়েছে। কেউ যদি টাকা পায় এবং মালিকের খোজ করে তাহলে বাড়িতে জানিও।সেদিন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম, বাবার এখনও মন খারাপ।বাইরে তাকিয়ে দেখলাম মিজান চাচা আর কতগুলো ছেলে,সাথে রাডারও আছে।তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে টাকাগুলো মনে হয় পাওয়া গেছে। বাইরে বেড়োতেই মিজান চাচা বলে উঠল,
-ভাইজান তোমার টাকা পাওয়া গেছে। আমাদের রাডার পেয়েছে!
এদিকে যেন তৃপ্তিকর নিশ্বাস নিল।টাকাটা বাবা হাতে পাওয়ার পর,
-এত দিন খালি শুনতাম,আজ দেখেও নিলাম মানুষ কেন তরে রাডার ডাকে। নে এই এক হাজার টাকা দিয়ে সবাই মিলে মজা খাইস।
ঘর থেকে মা বলে উঠলেন,
-সবাই আজকে খাওয়া-দাওয়া করে যাবে।
উত্তরে রাডার বলল,
-এতগুলি টাকা দিয়া কি করমু,কাকা আপনে একশ টাকা দেন। একশ। একশ টাকা দিয়ে সবাই মজা খাইয়া নিমু। আর কাকি আরেকদিন আইয়্যা খামুনে আজকা কেউ গোসল করছি না,সবাই মাত্র খেইল্লা আইছি।
রাডারের তার কর্মের জন্য সবার কাছে সমাদৃত। রাডারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামের পর গ্রাম।