কালভৈরব শিবের এক উগ্র রুপ। কালভৈরবকে পাপীদের দন্ডদাতা রূপে দেখানো হয়। তার এক হাতে শুল, এক হাতে দন্ড, হাতে মুন্ড থাকে ও এক হাত আশির্বাদ মুদ্রায় থাকে। কালভৈরবের বাহন কালো কুকুর। তীর্থরাজ প্রয়াগে কালভৈরবের মন্দির আছে। কালভৈরবকে মূলত অঘোরিদের দেবতা বলে মনে করা হয়।
এবার আসি কালভৈরবের জন্ম কাহিনিতে, 'শিব পুরান ও লিঙ্গ পুরান' মতে 'ব্রহ্মা' যখন জগতের প্রথম নারী 'শতরূপাকে' সৃষ্টি করলেন তখন ব্রহ্মা নিজেই তার রূপে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে এগিয়ে যান। শতরূপা সেটা বুঝতে পেরে ব্রহ্মলোক থেকে পৃথিবীতে পালিয়ে যান এবং ব্রহ্মার হাত থেকে লোকানোর জন্য শতরূপা বিভিন্ন প্রাণীর রূপ নিতে থাকেন, তখন ব্রহ্মাও সেই সেই রূপে তার পিছু নেয়। তখন শিব ব্রহ্মার এই ভাবে দেখে 'শতরূপাকে' 'ব্রহ্মার' হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিজের নাখ থেকে কালভৈরবকে সৃষ্টি করেন এবং 'কালভৈরব' ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক ছিন্ন করেন। ব্রহ্মার চার মাথা চার বেদের জ্ঞ্যান সম্পন্য কিন্তু এই পঞ্চম মস্তক কামাবৃত্ত ছিলো। যে মুহুর্তে কামের দমন হয় তখনই জ্ঞানের প্রকাশ ঘটে। সেই কারনে ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক ছিন্ন হওয়া মাত্রই ব্রহ্মা নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাপ্রার্থী হন।

বামন পুরানে অন্য একটি গল্প আছে। বামন পুরান মতে 'ভগবান বিষ্ণুর' নাভি থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয় এবং ভ্রুযুগলের মধ্য থেকে শিবের উৎপত্তি হয়। এর পর ভগবান বিষ্ণু অহংকার সৃষ্টি করেন। তার ফলে ব্রহ্মা ও শিব দুজনেই অহংকারের প্রভাবে এসে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেন এবং এর ফলে দুজনের মধ্যে প্রবল তর্কযুদ্ধ শুরু হয়। এই তর্কযুদ্ধে শিব পরাজিত হন ফলে শিব কালভৈরব রূপে নিজের নখ দ্বারা ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক ছিন্ন করেন। এতে যন্ত্রণায় কাতর ব্রহ্মা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সূর্যের সমান দিপ্তমান এক শ্বেতবর্ণ তেজস্বি পুরুষ সৃষ্টি করেন। সেই তেজস্বী দৈবপুরুষ চতুর্ভুজ মুর্তি ধারন করে ছিলেন এবং তার চার হাতে ধনুক, বান, তরবারি এবং ঢাল ধারন করে ছিল। সে শিবেকে উদ্যেশ্য করে বলে "ওরে অধর্মি তুই এই মুহূর্তে কৈলাশ থেকে দুরে হয়ে যা।" ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক ছিন্ন করার কারনে শিবের ওপর ব্রহ্মহত্যার পাপ লাগে এবং ব্রহ্মা তাকে অভিশাপ দেন যে ব্রহ্মার এই ছিন্ন মস্তক শিবের হাতেই লেগে থাকবে। শিব এতে দুঃখ পেয়ে কৈলাস ত্যাগ করে চলে যান এবং ভিক্ষুক বেশে বিচরণ করতে থাকেন, আর সৈই ব্রহ্মানির্মিত তেজস্বী দৈবপুরুষ কৈলাশ অধিকার করে এইভাবে একদিন তিনি বদ্রিকাশ্রমে(বদ্রিনাথ ধাম) গিয়ে ভিক্ষাপ্রার্থনা করেন। তার প্রার্থনায় নারায়ণ ভিক্ষা দেবার জন্য বাইরে আসে। নারায়ণ বলেন "যদি আপনি ভিক্ষা চান তবে প্রথমে আপনার ত্রিশূল দ্ধারা আমার আঙুলে প্রহার করুন।" নারায়ণের নির্দেশে শিব তার আঙুলে প্রহার করলে সেখান থেকে রক্তের তিনটি ধারা প্রকট হয়। তার দুটি ধারা থেকে 'মন্দাকিনী ও শিপ্রা' নামে দুই নদীর উৎপত্তি হয় এবং তৃতীয় ধারা মহাদেবের হাতের উপর পরে। এতে শিবের হাত থেকে ব্রহ্মার মস্তক আলাদা হয়ে যায় এবং ব্রহ্ম হত্যার পাপও ধুয়ে যায়। সেই জলধারা থেকে অগ্নির সমান তেজস্বী এক শ্যামবর্ণ এবং চতুর্ভুজ এক দৈবপুরুষের জন্ম হয়। সে তার চার হাতে ধনুক, বান, তরবারি ও শক্তিঅস্ত্র ধারন করে ছিল। সে হাত জোর করে নারায়ণকে প্রনাম করে বললো "আজ্ঞা দিন প্রভু" নারায়ণ আদেশ করলেন "ব্রহ্মা দ্বারা নির্মিত পুরুষকে বধ করো।" নারায়ণের আদেশে সে কৈলাশ যাত্রা করে এবং ব্রহ্মা নির্মিত দৈবপুরুষের সাথে প্রবল যুদ্ধের পর দুজনে দুজনকে বধ করে। এর পর ব্রহ্মা ও শিব দুজনেই দুজনের ভুল বুঝতে পারেন এবং দুজনেই দুজনের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হন।
কালভৈরবের মুর্তিতে তার হাতে যে মুন্ড থাকে সেটা ব্রহ্মারই মুন্ড বলে মনে করা হয়। যে ৫১ সতীপীঠ আছে তার প্রত্যেকটিতে শিবের একটি করে ভৈরব পাহারা দেয়।