আমার প্রতিদিন বেশ রাতে ঘুমানোর অভ্যাস। তবে সেদিন শরীরটা যানি কেমন করছিল।এমনতো কোনদিন হয়না,আজ শরীরটা এমন লাগছে কেন।ঘুমিয়ে পরলাম সাড়ে নয়টা কি দশটা বাজে।বালিশে মাথা রেখে মনে হলো আজ কলেজে হারকিউলিসের গল্পটা পরেছিলাম।গল্পটা ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের পাইনি।স্বপ্নে হটাৎ আবিষ্কার করলাম আমি এক গভীর নিশব্দ অরন্যের মাঝখানে এক বিশাল চৌকিতে শুয়ে।আমার বাম পাশ থেকে কিশের যেন ফুস-ফুস আওয়াজ আসছিল।বামদিকে ঘাড় ঘুড়াতেই দেখতে পেলাম এক মস্ত বাঘ দাঁড়িয়ে।ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল।আমি আরও আতংকিত হয়ে উঠলাম যখন বাঘটি আমার সাথে কথা বলতে শুরু করল!
-উঠেছেন মনীব,আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।চলুন আমাদের এখন যেতে হবে,বেশ তো ঘুমালেন।
আমি রিতিমতো অবাক!আমি আবার বাঘের মনিব হই কিভাবে।
-আমি এখানে কি করছি আর আমি এখনইবা কোথায় যাব?
-আপনি এখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আর আমি আপনাকে পাহাড়া দিচ্ছিলাম।আপনাকে তো আপনার রাজ্যে যেতে হবে।
-আমার রাজ্যে?!নাম কি আমার রাজ্যের?
-মিসিনা!
বাঘটা কথা না বাড়িয়ে আমাকে তুলে নিল নিজের পিঠে।আমিও বেশ আরামে চেপে পড়লাম।ছুটছে তো ছুটছেই গহীন অরন্য পার হলো,পার হলো বিশাল নদী, পার হলো বিশাল প্রান্তর।পদাঘাতে ভেঙেফেলছে পাথর,মাথার আঘাতে ভেঙেফেলছে গাছের ডাল।সারারাত দৌড়ানোর পর এবার থামলো।
-মনীব এসে পরেছি মিসিনায়।রাজা ইউরিসথিউয়াস আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
-কে এই রাজা ইউরিসথিউয়াস?
-আপনার চাচাতো ভাই,মিসিনার রাজা!!
এবার আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো আমি তাহলে-হারকিউলিস।
ইউরিসথিউয়াস এর কাছে হাজির হতেই আদেশ করল
-নিমিয়া উপতক্যার একটি সিংহ প্রজাদের বধ করছে,যাও সেখানে গিয়ে সিংহটিকে মেরে আমার কাছে সিংহের চামড়া নিয়ে আস।
প্রথমে তীর দিয়ে সিংহটিকে বধ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন কাজে আসেনি।তরপর সিধ্বান্ত নিলাম নিজের হাত ব্যাবহার করেই সিংহটিকে বধ করব।যা মোটেও সহজ ছিলনা।অনেক চেষ্টার পর হাতের আঘাতে সিংহটাকে বধ করলাম।ইউরিসথিউয়াস এর আদেশ ছিল চামড়া নিয়ে যাওয়া।আমি আস্ত সিংহটাকে কাধে তুলে চললাম মিসিনা এর দিকে।দরবারে হাজির হতেই এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখে ইউরিসথিউয়াস সহ উপস্থিত সবাই কেপে উঠল।

ইউরিসথিউয়াস এর পরবর্তী আদেশ ছিল আরগো নামক দেশকে ছারখার করে দেওয়া হাইড্রা নামক দানবকে হত্যা করা।হাইড্রার নয়টি মাথা ছিল।কথিত ছিল নয় নম্বর মাথাটা নাকি অমর।প্রথমে হাইড্রার মাথার মুগুর দিয়ে আঘাত করলাম কিন্তু যখনই মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করলাম দেখলাম সে যায়গায় আবার দুইটি মাথা গজিয়েছে।অনেক চেষ্টার পরও কিছু করতে পারলাম না।অবশেষে ভাই ইয়োলাসের সহযোগিতায় অমরণশীল মাথাটি ছাড়া সবগুলো মাথা আগুনে পুড়িয়ে দিলাম এবং অমর মাথাটিকে বিশাল পাহাড়ের নিচে পুতে ফেললাম।

এতক্ষনে সকাল হয়েগেছে, বাইরে ঊষার সোনালী আভা দেখা যাচ্ছে।বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে দেখি হাত-পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা।ব্যাথা এতই প্রচন্ড ছিল যে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।তখন বুঝতে পারলাম আসলে আমি স্বপ্ননোঙ্গর করেছি।