সারসংক্ষেপ আফিম যুদ্ধঃ-
আফিম যুদ্ধ মূলত ১৮৩৯ থেকে ১৯৪২ সালে এই যুদ্ধটা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য আর চিনের মধ্যে এই যুদ্ধটা হয়। বিশ্ব ব্যাবস্থা/বানিজ্য সেই আদিকাল থেকেই বেশ জটিল ছিল। এখন জটিল থেকেও জটিলতর হয়েছে। ধরুন, আপনার কাছে কোন একটা পণ্য আছে আপনি বেঁচেই যাবেন আর আমার কাছ থেকে বিনিময় প্রথা অনুসারে মূল্য আদায় করে নিবেন তা কি করে হয়? তাহলে আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে তাই নয় কি? এটা কে সামাল দিতে হলে অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরনের জন্য আমার কাছে যা আছে তা আপনাকেও কিনতে হবে আপনাকে আমার খদ্দের বানাতে হবে। তাহলে আমি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। ঠিক একই কারনে ইংরেজরা তৎকালীন সময়ে চীনাদের আফিমের নেশায় বুঁদ করে রেখেছিল। যাকে চা, সিল্ক আর সিরামিকের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের আফিমের বাণিজ্য যুদ্ধও বলতে পারেন। চীনের ছিল চা, সিল্ক, সিরামিক আর ইংরেজদের ছিল কূটকৌশল সাথে আফিম এ দুইয়ের বাণিজ্যের দেন দরবার ই মূল কারন। পৃথিবীর ইতিহাসের পাঁচটি কুখ্যাত বানিজ্যযুদ্ধে মধ্যে আফিম যুদ্ধ অন্যতম।
আফিম যুদ্ধের কারন ও ফলাফলঃ-
চীন আর ব্রিটেনের মধ্যে ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছিল প্রথম আফিম যুদ্ধ বা ফার্স্ট ওপিয়াম ওয়ার। সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে চীন ছিল কৃষিপ্রধান স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। ফলে আমদানিতে তাদের ছিল প্রবল অনাগ্রহ। তারা শুধু সোনা, রুপা আর আফিম আমদানি করত। সে সময় আফিম যে মাদক হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তা জানত না চীনারা। তারা আফিম ব্যবহার করত ছোটখাটো রোগের চিকিৎসার ওষুধ হিসেব। এই আফিম আসত মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।
এদিকে ব্রিটিশ বণিকদের কাছে চীনের চা, সিল্ক এবং চিনামাটির বাসন অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা ছিল। কিন্তু চীনারা কেবল রৌপ্যের বিনিময়ে তাদের পণ্য বিক্রি করত। ফলে ব্রিটেনের প্রচুর রুপা চীনের কাছে চলে যায়। এটা বন্ধ করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও অন্য ব্রিটিশ বণিকেরা ভারতে উৎপাদিত আফিম অবৈধভাবে চীনে পাচার করতে শুরু করে। এর বিনিময়ে তারা রুপা নিত। সেই রুপা দিয়ে চীনের চা, সিল্ক কিনত। একসময় চীনের জনগণ ব্রিটিশদের কাছ থেকেই আফিমকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করা শেখে। ফলে আফিমের চাহিদা আরও বেড়ে যায় চীনে।
আফিমের এই মারাত্মক অবস্থা বুঝতে পেরে চীনের তৎকালীন প্রতাপশালী রাজা চিয়াচিং আফিমের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু তত দিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে। আফিম সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন অনেক রাজকর্মচারীও। এমন পরিস্থিতিতে রাজা ক্যান্টন বন্দরে লিনসে-সু নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। ১৮৩৯ সালের ১০ মার্চ লিনসে-সু ক্যান্টন শহরের বিদেশি বাণিজ্য অঞ্চল অবরোধ করেন। তিনি বেআইনিভাবে রক্ষিত ব্যাপক পরিমাণ আফিম জব্দ করেন। আফিম ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চীন আক্রমণ করে ব্রিটিশরা। চীন সেই যুদ্ধে হেরে যায়। চীনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বন্দর ব্রিটিশদের ছেড়ে দিতে হয়। সেই সঙ্গে পুরো চীনে ব্যবসা করার অনুমতি এবং হংকংকে যুক্ত করা হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে।